বাণিজ্যিক ব্যাংক কি ? বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যাবলী

Last Updated on 3 months by Shaikh Mainul Islam

বাণিজ্যিক ব্যাংক শব্দটি সবাই শুনেছি। কিন্তু বাণিজ্যিক ব্যাংক কি? বাণিজ্যিক ব্যাংক কাকে অলে এই বিষয়ে অনেকেরই ধারণা অস্পষ্ট। অনেকে আবার জানেনই না বানিজ্জ ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য, বানিজ্জ ব্যাংকের মূলনীতি। অনেকে আবার জানতে চান বানিজ্জ ব্যাংক গ্রাহকদের কোন ধরনের সেবা নিশ্চিত করেন এ বিষয়ে।

দেশে বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৬৬ টি ব্যাংক আছে। এর মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংক মোট ৪৯ টি। যার মধ্যে ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং ৪৩টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ দেশের মোট বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৬ টির মালিক বাংলাদেশ সরকার। বাকি ৪৩ টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক অর্থাৎ ব্যক্তি মালিকানা।

আজকের পোষ্টে আমরা জানবো, বাণিজ্যিক ব্যাংক কি, বাণিজ্যিক ব্যাংক কাকে বলে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের লক্ষ্য বৈশিষ্ট্য কি, বাণিজ্যিক ব্যাংকের মূলনীতি। জানবো কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য, বাণিজ্যিক ব্যাংকের মৌলিক উদ্দেশ্য কি, বাণিজ্যিক ব্যাংক সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য। চলুন বাণিজ্যিক ব্যাংক কি শিরোনামের পোষ্টে এই ব্যাংক নিয়ে বিস্তারিত সবকিছু জেনে নেওয়া যাক।

বাণিজ্যিক ব্যাংক কি

বাণিজ্যিক ব্যাংক হলো এমন একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান, যা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অর্থ আমানত হিসেবে নিজের কাছে জমা রাখে।

জমাক্রিত টাকা অপর ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে তাদের প্রয়োজন সাপেক্ষে ঋণ হিসেবে প্রদান করে থাকে।

এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জমা করা অর্থের জন্য কম হারে সঞ্চয়ী সুদ প্রদান করে থাকে।

অন্যদিকে অধিকতর হারে বিনিয়োগের সুদ ধার্য করে বেশি পরিমাণ টাকা মুনাফা হিসেবে লাভ করে।

যে ব্যাংক মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে অর্থ এবং অর্থের মূল্য নিরূপণযোগ্য পণ্য ও দ্রব্যের লেনদেন করে, তাকে বাণিজ্যিক ব্যাংক বলে।

আবার বলা যায়, বাণিজ্যিক ব্যাংক হলো অর্থ এবং মূলধনের কারবারি। মধ্যস্থ কারবারি হিসেবে ব্যাংক শর্ত সাপেক্ষে একপক্ষ থেকে অর্থ ধার করে অন্য পক্ষকে সে অর্থ ঋণ হিসেবে দেয়।

এই প্রক্রিয়া সম্পন্নকারী ব্যাংককে বাণিজ্যিক ব্যাংক বলে।

বাণিজ্যিক ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য সমূহ

অন্য ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ব্যাংকেরও বৈশিষ্ট্য আছে। যাকে উদ্দেসশমুলক কার্যাবলী ও বলা যেতে পারে। অর্থাৎ একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক যেসব কাজ করে থাকে এবং যে উদ্দেশ্য নিয়ে সেগুলি করে থাকে।

বাণিজ্যিক ব্যাংক কি জানার পড়ে এখন জানবো বাণিজ্যিক ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য সমূহ।

১) বাণিজ্যিক ব্যাংকের সর্ব প্রথম এবং মূল উদ্দেশ্য হলো মুনাফা অর্জন করা।

২)বানিজ্জিক ব্যাংক বিভিন্ন হিসাবের ভিত্তিতে তুলনামূলক কম সুদের বিনিময়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে।

৩) মানুষের কাছ থেকজে সংগ্রহীত টাকা বেশি সুদের বিনিময়ে সাধারণ কম মেয়াদি ঋণ হিসেবে অন্নদের দিয়ে থাকে। তবে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ও দেয়।

তবে সেক্ষেত্রে ঋণ নেওয়া ব্যক্তির তা পরিশোধ করার সামর্থ্য বুঝে তবেই ঋণ দেওয়া হয়।

৪) অর্থ জমা দেওয়া ব্যক্তিদের উত্থাপিত চেকের মূল্য পরিশোধ করে থাকে।

৫) ব্যাংকিং সেবার মধ্যে অন্যান্য সেবা প্রদান করে অন্য ব্যাংকের মতোই।

৬) সঞ্চয় হিসাব, ফিক্সড ডিপোজিট সহ সব ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য

কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক ব্যাংক এর উদ্দেশ্য, কার্যাবলী, সেবা সবি আলাদা।

চলুন জেনে নেওয়া যাক কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য সমূহ।

১) বাণিজ্যিক ব্যাংক দেশের ব্যাংকিং আইন এবং কোম্পানি অনুযায়ী গঠিত হয়ে থাকে।

যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারীর বিশেষ আইন দ্বারা গঠন হয়ে থাকে।

২০ বাণিজ্যিক ব্যাংকের উদ্দেশ্য মানুষের কাছ থেকে সল্প মুনাফায় টাকা গ্রহণ  করে এই টাকা বেশি মুনাফায় ব্যক্তি/ প্রতিষ্ঠানকে বেশি সুদে ঋণ হিসেবে দিয়ে থাকে।

৩) বাণিজ্যিক ব্যাংক জনগণের নিকট হতে বিভিন্ন হিসাবের মাধ্যমে টাকা/ হিসাব গ্রহণ করে থাকে।

যেখানে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক জনগণের নিকট হতে কোন প্রকার টাকা/হিসাব গ্রহণ করে না।

৪) বাণিজ্যিক ব্যাংক দেশের মুদ্রা বাজারের মেম্বার হিসেবে কাজ করে। যেখানে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের মুদ্রা বাজার অভিভাবক হিসেবে কাজ করে থাকে।

৫) বাণিজ্যিক ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যেখানে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকার এবং সরকারের বিশেষ আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।

৬) বাণিজ্যিক ব্যাংক সরকারি বেসরকারি মালিকানায় হয়ে থাকে । অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারি মালিকানায় হয়ে থাকে।

৭) একটি দেশে একাধিক বাণিজ্যিক ব্যাংক থাকতে পারে যার সংখ্যা হতে পারে অগণিত। যেখানে, একটি দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থাকে মাত্র একটি। দ্বিতীয় কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত সম্ভব না।

৮) বাণিজ্যিক ব্যাংক চাইলেই দেশে-বিদেশে শাঁখা খুলতে পারে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটিই হয়ে থাকে।

৯) বাণিজ্যিক ব্যাংক গ্রাহক এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে সবসময়। যেখানে, কেন্দ্রীয়  ব্যাংক সরকারের বিভিন্ন ব্যাংক হিসেবে কাজ করে। যা সব ব্যাংকের মাথা হিসেবেও কাজ করে বলা হয়।

আরও পড়ুনঃ কৃষি ব্যাংক একাউন্ট করার নিয়ম এবং খুব সহজে কৃষি লোন নেওয়ার উপায়

১০) বাণিজ্যিক ব্যাংক নোট এবং মুদ্রার প্রচারে সাহায্য করে থাকে মাত্র।

অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এককভাবে দেশের নোট প্রচলন করে থাকে নিজস্ব ভাবেই।

১২) বাণিজ্যিক ব্যাংকের সকল হিসাব প্রতি সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে প্রেরণ করতে হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি বছরে একবার সরকারকে হিসাব দেয়।

বাণিজ্যিক ব্যাংকের মৌলিক উদ্দেশ্য কি

বাণিজ্যিক ব্যাংক একধরনের লাভজনক প্রতিষ্ঠান যারা মানুষের কাছ থেকে স্বল্প মুনাফায় টাকা নিয়ে থাকে।

সেই টাকা বেসি সুদে ব্যক্তি বা প্রতিস্থাঙ্কে ঋণ হিসেবে দিয়ে থাকে।

সঞ্চয়পত্র কোন কোন ব্যাংকে করা যায়

অর্থাৎ, আরও সহজ ভাবে বললে, বাণিজ্যিক ব্যাংকের মৌলিক উদ্দেশ্য সুদের বিনিময়ে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে টাকা ধার দেওয়া। অর্থাৎ, মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে কাজ করে বাণিজ্যিক ব্যাংক।

এছাড়াও সঞ্চয় এবং স্বল্পমেয়াদী ঋণ সংগ্রহ করে।

বিনিময় মাআধম হিসেবে কাজ করে আবানিজ্জিক ব্যাংক। বিনিময় মাধ্যমে অধিক মুনাফা অর্জন করে থাকে এই ব্যাংক। শাখা ব্যাংকিং ব্যবস্থা করে গ্রাহক সংখ্যা বাড়িয়ে থাকে।যাতে করে অনেক বেশি হিসাব খুলতে পারে জনগন। আর যত বেশি হিসাব খোলা হবে ব্যাংকে তত বেশি লেনদেন হবে।

আর বাণিজ্যিক ব্যাংকের মুনাফা কম বেশি নির্ভর করে ব্যাংকের লেনদেনের উপরে।

জীবন বীমা কি কত প্রকার ও কি কি

সব বাণিজ্যিক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যান বা কেন্দ্রিয়ু ব্যাংকের তালিকা ভুক্ত ব্যাংক হয়ে তবেই বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে পথ চলা শুরু করতে হয়।

আর তালিকাভুক্ত ব্যাংক হওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সক শর্ত পূরণ করতে হয়।

সেবা ধরমি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক নিজেদের এগিয়ে রাখতে চায়। কারণ, সেবাধর্মী কাজের মাদ্ধমেই বাণিজ্যিক ব্যাংক কি সকল পর্যায়ের মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারে।

আর মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারলেই মানুষ তাদের সাথে বেশি বেশি লেনদেন করবেন।

এই আশায় সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবেও কাজ করে বাণিজ্যিক ব্যাংক।

বাণিজ্যিক ব্যাংকের মূলনীতি

সব ধরনের বাণিজ্যের কিছু মূলনীতি থাকে। ঠিক তেমনই সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকের মূলনীতি আছে।একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক যেসব মূলনীতি মেনে চলে তা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

  1. তারল্যের নীতি,
  2. সচ্ছলতার নীতি,
  3. নিরাপত্তার নীতি,
  4. মুনাফার নীতি,
  5. সঞ্চয় সংরহের নীতি,
  6. ঋণ দেওএ এবং বিনিয়োগের নীতি,
  7. দক্ষতার নীতি,
  8. সেবার নীতি,
  9. আস্থা অর্জনের নীতি

আরও পড়ুনঃ অগ্রণী ব্যাংক লোন সম্পর্কে বিস্তারিত

  1. গোপনীয়তার নীতি,
  2. আধুনাকায়নের নীতি,
  3. অবস্থানের নীতি,
  4. প্রচারের নীতি,
  5. সুনাম নীতি।

উপরের সবগুলো নীতি মেনে তবেই একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক এগিয়ে যায় সাম্নের দিকে। ব্যাংকের বেলায় সবার প্রথমে দরকার গ্রহকদের কাছে আস্থা অর্জন।

আর সেই আস্থা অর্জন করার জন্যই সব ধরনের নীতি মেনে চলতে হয়।

বাণিজ্যিক ব্যাংক FAQS

দেশে মোট কয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংক আছে?

৪৯ টি বাণিজ্যিক ব্যাংক আছে। এর মধ্যে ৬ টি বাণিজ্যিক ব্যাংক সরকারি এবং ৪১ টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক।

বাণিজ্যিক ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য কি?

মুনাফা অর্জন করা।

সকল বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে একটি সেবা মিল পাওয়া যায়। সেই সেবাটি কি?

সেবাধর্মী কাজ।

বাণিজ্যিক ব্যাংকের লেখা নিয়ে সর্বশেষ

আজকের পোষ্টে আম্রে জানতে পেরেছি বাণিজ্যিক ব্যাংক কি? বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যাবলী।

জানতে পেরেছি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য কি।

আশা করছি এই বিষয়ে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার পড়ে আর অজানা কিছু থাকবে না।

সর্বশেষ আপডেট পেতে আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ Dainikkantha এ চোখ রাখুন। 

Leave a Comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.